Hidden demerits of democracy
July 21, 2023: নির্বাচন মানেই রক্তপাত। ভারতের ছবিটা অনেকটা এরকমই। স্বাধীনতার পর থেকেই। মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য যে পদ্ধতিটি, যা মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়েছিল তা মানুষকে ক্ষমতার অলিন্দে আদৌ পৌঁছে দেয় কি? উপনিবেশবাদের পর নয়া উপনিবেশবাদের চোরা আক্রমণ আসলে গণতন্ত্র নামক পদ্ধিতিটিতেই বিগড়ে দিয়েছে।
গোড়ায় গলদ রেখেই গণতন্ত্র নামক সোনার পাথরবাটি তুলে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক নেতৃত্বের হাতে। কি বলতে চাইছি ? তার জন্য গণতন্ত্র্রের পরতে পরতে রেখে দেওয়া ছিদ্রগুলোর দিকে চোখ রাখতে হবে। তাহলে কি এই বর্জ্য গণতন্ত্রের আছে কোনো বিকল্প বা উল্টে পাল্টে একে সময়পোযগী করা যায়?
ভারতবাসী যে গণতন্ত্র পেয়েছে তাকে এককথায় ভেঙে পড়া গণতন্ত্র বললে ভুল হবে না। বলা যায় গণতন্ত্রের বর্জ্য। কিন্তু বিষয়টা এতটাই বিতর্কিত যে গনত্রন্ত্রের নেতিবাচক দিক নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চান না। গনত্রন্ত্রকে প্রশ্ন করার মধ্যেই গণতন্ত্রের সময়োপযোগী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। আসলে বড় হওয়ার সময় এভাবেই আমাদের বোঝানো হয়েছে, পড়ানো হয়েছে। গণতন্ত্রের ত্রুটি? সেটা আবার কী? প্রশ্ন করলেই আপনি সমাজবিরোধী এমনকি দেশবিরোধী হিসেবে তকমা পেয়ে যাবেন। কোথায় গণতন্ত্রের ত্রুটি। কেনই বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এত হিংসে আর রক্তপাত-সঠিক বা আসল উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।
হাতের সামনেই রয়েছে উদাহরণ। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। একাধিক ক্ষমতাশালী ও ধনী রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের দাবার ঘুটির মত ব্যাবহার করে গণতন্ত্রে নিজেদের ক্ষমতা লাভের জন্য লড়াই করল। মরল কারা? দাবার ঘুটির মত ব্যবহৃত দলীয় কর্মীরা! ৮ জুলাই নির্বাচন হয়েছে। তার অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে দলীয় কর্মীদের মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছিল। পঞ্চায়েতের মোট ৭৪ হাজার আসনের মধ্যে একটি দলের অধিকাংশ আসন জিতে ক্ষমতা লাভ করা। সবই গণতন্ত্রের দান!
Digging deep into demerits of democracy
ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। নাগরিক ভোটার কি পেল এতবছর ধরে। কি-ই বা তারা পায়। মানুষের জীবনের সার্বিক উন্নতি আজ পর্যন্ত কোথায় হয়েছে? সবার জন্য শিক্ষা, স্বাথ্য, কর্মসংস্থান এর গ্যারান্টি কোথায়? মানুষকে মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝানো হয়েছে এই তোমার ক্ষমতা দেখানোর সময়। নিজের সামাজিক সুরক্ষার কথা না ভেবেই মানুষ ক্ষমতার ইলুশন-এ ভোট দিতে যান। আর এই ইলুশন তৈরিতে কর্পোরেট মিডিয়া বা পেইড মিডিয়ার অবদান সব থেকে বেশি।
গণতন্ত্রের এই বর্জ্য নিয়ে মানুষকে বিভোর করে রেখে আসল ইস্যু থেকে সরিয়ে দাও। তথাকথিত গণতন্ত্র বাঁচাতে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়বেন না খেতে পাওয়া মানুষই। খেয়োখেয়ি করবে, রক্তপাত হবে, আর গণতন্ত্র সবথেকে ধনী, বেশি ক্ষমতাবান এবং সবথেকে দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই গণতন্ত্র কীভাবে ভারতে এল? যে গণতন্ত্রে শেষ হাসি হাসে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলো। কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল যেখানে দুটো বা তিনটে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল স্বদেশি বা বিদেশি টাকার অনুদানে ভোট জেতে? তথাকথিত ছোট রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু নির্বাচন জেতে না।
ক্ষমতাশালী ও বিত্তশালী প্রার্থীও সেই দলগুলোর ব্যানারে নির্বাচনে লড়াই করে। সব সমীকরণেই তারা দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পারে নির্বাচনের আগে জলের মত টাকা খরচ করে। আর এখানেই গণতন্ত্র কবে কর্পোরেট গণতন্ত্র হয়ে গেছে আমরা তা খেয়ালও করিনি। আমরা কিন্তু বলছি না যে গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। কিন্তু গণতন্ত্র বর্জ্য হলে তাকে প্রশ্ন করতে হবে বৈকি?
Demerits of democracy and their origins
কীভাবে আমরা এই ভাঙা গণতন্ত্র পেলাম? খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর গ্রীসে গণতন্ত্র্রের জন্ম হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু দেশ বা রাজ্য পরিচালনার দৈনন্দিন কাজে নাগরিকের অংশগ্রহণ বাস্তবে সম্ভব নয় বলে সেদিনের গ্রীস নাগরিক গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারপরেও পৃথিবীর খুবই সামান্য কিছু দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসনকার্য চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এককথায় প্রাচীনকালে, মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে ছিল রাজতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, এবং সামরিক একনায়কতন্ত্র। ১৯৪৪।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি গণতন্ত্রের আবির্ভাবের ক্ষেত্রে এক মাইলস্টোন। ৪৪টা দেশের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রপ্রধানরা আমেরিকার মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে আলোচনায় বসলেন। ব্রেটন উডস কনফারেন্স নামে যে আলোচনা বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি। ঘরোয়া আলোচনায় নেওয়া হয়েছিল দুটো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এক, পৃথিবী জুড়ে প্রত্যেক দেশে দুই-দলের গণতন্ত্রে দেশ চালানোর চেষ্টা করা হবে। দুই, পৃথিবীর শাসনভার তুলে দেওয়া হবে ‘ফিনান্সিয়াল এলিটদের’ হাতে। তৈরি হবে আই.এম.এফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তার সঙ্গে নানারকমের আন্তর্জাতিক ট্রেড রুল। আসলে সেই মিটিং ছিল ভাঙা গণতন্ত্রের প্রবর্তক।
যেখানে একটা দেশে দুটো বা বড়জোর তিনটে দলের হাতে থাকবে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা। তাদের হাতেই থাকবে সমস্ত ক্ষমতা। এমনকী, ফান্ডিংও- সে দেশের হোক বা বিদেশের হোক, সেই দুটো বা তিনটে দলকেই করা হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আয়োজন তাদের হাতে থাকবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তো কথাই নেই, কিন্তু নির্বাচন হিংসাত্মক হলেও সরকার চালানোর ক্ষমতা সেই তাদের হাতেই থাকবে। আর মানুষকে গণতন্ত্রের এই নেশা ধরানোর জন্য ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হলো ফান্ডেড কর্পোরেট মিডিয়াকে।
সাধারণ মানুষও সেই প্ররোচনায় উৎসাহিত হল, কিন্তু বুঝল না যে, তাদের সামনে আসলে কিন্তু বিকল্প রাখা হয়নি। যে দুটো বা তিনটে রাজনৈতিক দলের হাতে দেশ চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে তারা একই মূদ্রার দুটো পিঠ! নাগরিক বা ভোটারদের প্রতি যাদের ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। ক্ষমতা ভোগ করা দুটো বা তিনটে দলেরই একই চেহারা। তাহলে আমাদের সামনে কোনও ‘রিয়াল চয়েস’ নেই।
Demerits of democracy: Bengal panchayat polls example
সাম্প্রতিকতম পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনা যদি এই প্রসঙ্গে উদাহরণ হয় তাহলে বলি শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ-যেখানে দুই বা তিন দলের মধ্যেই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সেখানেই ছবিটা একরকম। আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি ইত্যাদি।
কিন্তু এই ভাঙা গণতন্ত্র কি জোড়া যায়? এর কি সত্যিই কোনও সমাধান আছে? ভাঙা গতন্ত্রের ইলুশন থেকে মানুষকে বার করার কথা বহু আগেই ভেবে ছিলেন বিপ্লবী নেতা শচীন্দ্রনাথ সান্যাল। তিনিই ভারতের রাইট তো রিকল অর্থাৎ ফিরিয়ে নেয়ার অধিকারের প্রবর্তক। তাঁর প্রস্তাব ছিল সুস্থ্য গণতন্ত্রে ব্যর্থ এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধহীন রাজনীতিককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকবে জনগণের হাতে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের আগেই দায়বদ্ধহীন রাজনীতিককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারবে জনগণ।
রাইট টু রিক্যালের মাধ্যমে। সংবিধানের প্রণেতা বি আর আম্বেদকরকে তিনিই প্রস্তাব দেন এই রাইট টু রিকল সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে কিন্তু রাজি হননি আম্বেদকর। পরে রাইট টু রিকল নিয়ে নতুন করে লড়াই শুরু করেন নয়া উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা এক স্বাধীনতা সংগ্রামী। তার নাম রাজীব দীক্ষিত। তিনি মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, এই পদ্ধতি গণতন্ত্রে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রনায়কদের দায়বদ্ধতা তৈরি করবে। সাধারণ মানুষকে শোষণ করার আগে নেতারা ভাবতে বাধ্য হবেন। রাজীব দীক্ষিতের চেষ্টা সফল হয়নি। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল তার।
Right to recall vs. Demerits of democracy
রাইট টু রিকল উত্তর প্রদেশ, ঝড়খন্ড, বিহার, মধ্যেপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভাঙাভাবে আনা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে পার্লামেন্ট-এ এই বিল আনার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। বর্তমানে আমেদাবাদ নিবাসী এক্টিভিস্ট রাহুল মেহতা এই নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য রাইট টু রিকল আনার চেষ্টা করছেন।
গণতন্ত্রকে প্রাসংগিক করা নাগরিকদের কাজ যা করতে চেয়েছিলেন সচীন্দ্রনাথ সান্যাল, যা করতে চেয়েছিলেন রাজীব দিক্সিত যা করছেন রাহুল মেহতা। কিন্তু কি কারণে এই কাজ করায় এতো বাধা? যা ১৯২৪ থেকে শুরু হয়ে এখনো হলো না ? না, করতে দেওয়া হয় না? কর্পোরেট গণতন্ত্রে রাজনীতির ড্রাগ গুলে খাওয়ানো হয় তার শীর্ণ জীর্ণ সেবকদের। তাই এই কর্পোরেট গণতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন এবং তা কোনো অধরা কাজ নয়, শুধু এটাই যে উদ্যোগী হতে হবে মানুষকেই।
REPUBLISHING TERMS:
All rights to this content are reserved. If you want to republish this content in any form, in part or in full, please contact us at writetoempirediaries@gmail.com.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন। https://cutt.ly/BT4TBBk
আমাদের প্রতিবেদন/ভিডিও রিপোর্ট আপনার ওয়েবসাইট-এ পুনঃপ্রকাশ করতে আগ্রহী? আপনাকে স্বাগত!
১) প্রতিবেদকের নাম প্রতিবেদনের উপরের দিকে ব্যবহার করুন
২) প্রতিবেদনের লিঙ্ক দিন
৩) প্রতিবেদনের নিচে লিখতে ভুলবেন না: ‘প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে Empirediaries.com-এ
৪) হাইপারলিঙ্ক করুন আমাদের ওয়েবসাইট Empirediaries.com
ইউটিউব-এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে যান, বেল আইকন দিতে ভুলবেন না যেন! https://www.youtube.com/c/EmpireDiaries
সরাসরি আপডেট পান : হোয়াটস্যাপ করুন ‘আপডেট’ ৯৮২১০৪৫৭৩৯ নম্বরে
ফলো এবং লাইক করতে ভুলবেন না, আমরা আছি
ফেসবুক: https://www.facebook.com/empirediaries
টুইটার : https://twitter.com/diaries_empire
টেলিগ্রাম: https://t.me/empirediaries
ইমেইল: writetoempirediaries@gmail.com
You may also read our special report in English on the demerits of democracy and the dark origins of the system. Check it out.