মেধা পাচার — উদ্দেশ্য এবং অভিসন্ধি
জুলাই ৩, ২০২৩, ভাবনা পক্ষ – ২:
অনেকেই বলেন ব্রেন ড্রেন (Brain drain India) একটা পুরোনো ব্যাপার। নকশাল আন্দোলনের পর এই বিষয়টি নিয়ে সবথেকে বেশি ঝড় উঠেছিল। আমরা একটু বর্তমানের দিকে নজর রাখবো।
মেধা পাচার অতীত নয়, বরং ব্রেন ড্রেন (Brain drain) এখন যতটা হচ্ছেটা আগে কি সত্যিই ততটাই হয়েছে এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মেধা পাচার বর্তমান ভারতের একটা জলজ্যান্ত সমস্যা। বুদ্ধিমত্তায় ভারতীয়রা গোটা পৃথিবীতেই কদর পায়।
ভারতের জনসংখ্যাও এখন চীনকে ছাপিয়ে গেছে। জনসম্পদ বেশি, বুদ্ধিমত্তাও বেশি, অথচ ভঙ্গুর অর্থনীতি, চূড়ান্ত অসাম্য, ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ভেঙে পড়া কৃষি ব্যবস্থা, মুষ্টিমেয়র হাতে দেশের অর্থসম্পদ, দিনের পর দিন বেড়ে চলা গরিবি সব মিলিয়ে দেশ হিসেবে আমরা একেবারে লন্ডভন্ড।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি। কেন গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভগ্ন? পরিকাঠামো তৈরী করার অনীহা তো আছেই, তার সঙ্গে আছে আরো একটা করুণ তথ্য। ভারত একটা এমন দেশ যেখানে থেকে বিশ্বের সবথেকে বেশি সংখ্যক ডাক্তাররা বিদেশে পাড়ি দেন।
অর্থাৎ বেশিরভাগ মেধাবী ডাক্তাররা ভারতে থাকেন না। ৭৫,০০০ ভারতীয় ডাক্তার ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। বিদেশী কোম্পানিতে সার্ভিস দিচ্ছেন, সমৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে ৩ কোটি ২০ লক্ষ ভারতীয় বিদেশে থাকেন এবং নানা বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেই সব কোম্পানিকে বড়োলোক করছেন। ভারত এমন একটা দেশ যেখান থেকে সব থেকে বেশি মানুষ বিদেশে থাকেন এবং কাজ করেন।
কেন এই মেধা প্রবাহ উল্টোদিকে ধাবিত হচ্ছে? বেশি উপার্জনের নেশা যেমন আছে তেমনি আছে পশ্চিম সম্পর্কে একটা উচ্চ ধারণা (Fascination about the West) বলা যায় যা তৈরি করা হয়। কীভাবে? ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে। যা আসে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার ফলে।
ইংরেজি মাধ্যমেই শিশুকে তৈরি করা হয় বিদেশে যাওয়ার জন্য। স্কুল ব্যবস্থাতেই বিদেশে পাড়ি দেওয়ার বীজ রোপিত হয়। বলাই বাহুল্য আজ ভারতে ৫৪,০০০ বেশি চার্চ স্কুল এবং কলেজ রয়েছে। এই স্কুলগুলি এবং অন্যান্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে প্রতিভাদের ছেঁকে তোলা হয়।
মেধাবী না হলে এইসব স্কুল- কলেজে ভর্তি হওয়া বা পড়াশুনো করা যায় না। তাহলে কী দাঁড়ালো? কেন প্রতিভা ছেঁকে তুলে বিদেশে পাঠানোর জন্য মানসিকভাবে তৈরি করা হয়? আজ ভারতে ৪৫০০-এর বেশি বিদেশী কোম্পানি রাজ্ করছে।
এই সব কোম্পানিগুলির সমস্ত উচ্চপদে ভারতীয়রাই। আর ভারতীয়রাই এইসব কোম্পানিতে বসে সেই সব কোম্পানিদের সাহায্য করছে ভারত থেকে টাকা তুলে কোম্পানিদের সমৃদ্ধি ঘটাতে। আর এরাই যুব ভারতীয়দের কাছে রোল মডেল।
মাইক্রোসফটের সত্য নাডেলা, আলফাবেটের সুন্দর পিচাই, এডোবের শান্তনু নারায়ন, আই বি এম -র অরবিন্দ কৃষ্ণা, লিন্ডের সঞ্জীব লাম্বা, এরাই এখন রোল মডেল।
এতে ব্যাক্তিগত লাভ তো হচ্ছে কিন্তু দেশের লাভ কী হচ্ছে? স্বল্প মেধার দেশে যা ঘটার তাই ঘটছে। স্বল্প মেধার রাজনৈতিক নেতা, কর্পোরেটের দাস মিডিয়া, ভালো ইন্ডাস্ট্রি তৈরি না হওয়া, ভেঙে পড়া কৃষি, স্বাস্থ্য এবং লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে চলা অসাম্য। ফলে ব্যক্তিগত লাভ আর দেশের লাভ দাড়িপাল্লায় রাখলে দেশের ভাঁড়ারে ক্ষতিই বেশি।
কিন্তু এই যে ইংরেজি মাধ্যম দিয়ে প্রতিভা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার কারণ কী? এর উদ্দেশ্য কী, অভিসন্ধিই বা কী?
ভাবনা পক্ষের দ্বিতীয় এপিসোড শুনুন, মতামত জানান, শেয়ার করুন। সঙ্গে থাকুন Empire Diaries-এর।
ভাবনা পক্ষ – হোম পেজ
REPUBLISHING TERMS:
All rights to this content are reserved. If you want to republish this content in any form, in part or in full, please contact us at writetoempirediaries@gmail.com or empirediaries@protonmail.com.