দেশ, দশ এই নিয়েই থাকবে?
অক্টোবর ১, ২০২৩, ভাবনা পক্ষ – ৬:
আমাদের দেশের মধ্যে আসলে দুটো দেশ আছে। একটা দেশের দুটো প্রবাহ আছে। নাম যাই হোক না কেন, ভারত হোক বা ইন্ডিয়া, খুব কী বদলাচ্ছে দেশের মাটির রং? ধানের গন্ধ বা শ্রমিকের শরীরে ক্লান্তির জলছবি?
নাম বদল (India Bharat debate) যদি তা ঔপনিবেশিকতাকে বিদায় জানানোর কারণে হয় তাহলে তা অবশ্যই স্বাগত। আমরা যেমন এম্পায়ার ডায়েরিজ (Empire Diaries) অনেক আগে থেকেই ভারত শব্দটা ব্যবহার করছি। আমাদের ইংরেজি প্রতিবেদনেও Delhi নয়, দিল্লি শব্দটাই ব্যবহার করছি। তবে এটা নিয়ে ঢাকঢোল না পিটিয়েই। এটা আসে বা আমাদের ক্ষেত্রে এসেছে ভিতর থেকেই। ঢাকঢোল পেটানোর প্রয়োজন হয়নি। সম্প্রতি নাম বদলের বিতর্ক শুরু হওয়ার পর অনেকেই আমাদের জিজ্ঞাসা করেছেন এর কারণ কী। কেন আমরা ভারত বলছি। আসলে নাম নিয়ে এতো বেশি নাম কীর্তন হচ্ছে তার মাঝে চাপা পড়ে যাচ্ছে আমাদের আসল ইস্যুগুলো।
অনেকেই ভাবেন ইন্ডিয়া নামটা ব্রিটিশদের দেওয়া। আসলে এই ইন্ডিয়া নামটা এনেছে গ্রিকরা। সিন্ধু থেকে। সিন্ধু নদের নাম থেকে সিন্ধু নদ এবং সিন্ধু উপত্যকা যার একটা অপভ্রশ হলো ইন্দাস নদী বলতো গ্রিকরা বা ইন্দাস ভ্যালি। এই ইন্দাস নাম থেকে ইন্ডিয়া এসেছে যা গ্রিকদের অবদান।
এই ইন্দাস নামটা গ্রিকেরা ব্যবহার করা শুরু করে পঞ্চম শতক থেকে। তারও আগে পার্সিয়ানরা আসলে এই সিন্ধ থেকে হিন্দ শব্দটা আনে। আর হেরোডোটাস একজন গ্রিক ভূ-বিশেষজ্ঞ যাঁকে ফাদার অফ হিস্টরি বলা হয় তিনি এই ইন্ডিয়া এই নামটা জনপ্রিয় করেন। তাঁরও আগে মেগাস্থেনেস ভারতের ইতিহাস লেখেন বইটির নাম ছিল ইন্ডিকা। সেই নামের অপভ্রংশ ইন্ডিয়া। পরে ব্রিটিশরা এই নামটাই ব্যবহার করা শুরু করে। এটাই আমাদের ইন্ডিয়া নামের জন্মবৃত্তান্ত।
ভারতের তথাকথিত শিক্ষিত, শহুরে সমাজ এই ইন্ডিয়া নামটাই ব্যবহার করতে পছন্দ করে। ইন্ডিয়া মানে এগিয়ে থাকা শ্রেণী আর ভারত মানে গরিব, তথাকথিত অশিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণী। অর্থাৎ নামের মাধ্যমে একটা শ্রেনি বিভাজন করে দেওয়া যাচ্ছে। যা নিয়ে আমাদের শহুরে ক্লাস খুশি। এই ইন্ডিয়া নামটা ব্যবহার করা আসলেই cultural imperialism-র ফল। কিন্তু যারা এই দেশের জল, মাটি, শস্য, রং, নদী, জঙ্গল, পাহাড় আগলে রেখেছেন তাঁদের কাছে ভারত ভারতেই আছে।
ঔপনিবেশিকতা থেকে বেরিয়ে আসার একটা ছোট্ট পদক্ষেপ নাম বদল কিন্তু অর্থনৈতিক লুট বন্ধ না করে শুধুই নামবদলের চমক আসলে এক গিমিক যা সাধারণ ভোটারকে বশ করার এবং বোকা বানানোর একটা চমৎকার উদ্যোগ। নাম বদলের স্বার্থকতা তখনই থাকবে যখন দেশ তার প্রতিটি মানুষকে ভালো রাখতে পারবে যা এই অর্থনৈতিক লুট বন্ধ হলেই একমাত্র সম্ভব।
ভাবনা পক্ষ – হোম পেজ
REPUBLISHING TERMS:
All rights to this content are reserved. If you want to republish this content in any form, in part or in full, please contact us at writetoempirediaries@gmail.com.