রত্না
রাষ্ট্রশক্তির কাছে ড: কাফিল খানের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, তাঁকে জাতীয় হিরো বানিয়ে দেওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আলিগড়ের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্র ভূষণ সিংহের কাছেও। গত দেড় বছরের ঘটনাক্রম দেখলে অর্থাৎ, প্রশাসনের সংগঠিত প্রয়াসে ড: কাফিল খানকে জেলে ভরা থেকে তাঁর হিরো হয়ে ওঠা, এই গোটা ঘটনা একটা সুন্দর প্রয়াসে হয়েছে এমনটাই মনে হবে। সাতমাস বাদে জেল থেকে বেরোনো ড: কাফিল খান আর পুরনো কাফিল খান দুজন এক্কেবারে অন্য মানুষ।
২০১৭-র আগস্টে, গোরখপুরের হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে চার দিনে ৬৩ জন শিশু মৃত্যুর ভয়াবহ ঘটনার আগে অবধি কাফিল খান একজন অত্যন্ত সাধারণ ডাক্তার, সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মচারী ছিলেন। এখানে সাধারণ মানুষ এবং ডাক্তার বলতে বোঝানো হচ্ছে যিনি কর্তব্যপরায়ণ, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন, এবং একজন সংবেদনশীল চিকিত্সা কর্মী। আগুনে বক্তৃতা বা আদর্শবাদী এক্টিভিজম কোনোটাই তিনি কোনোওকালে করেননি। বরং তাঁর ডেন্টিস্ট স্ত্রীর নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালও আছে।
গোরখপুর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বরং তিনি বিপদকালীন পরিস্তিতিতে একজন চিকিৎসকের মতই কাজ করেছিলেন। ছুটে, দৌড়ে, ভিক্ষা করে, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাচ্ছাদের জন্য আপৎকালীন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এপর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু বিপদ ঘনিয়ে এলো মিডিয়াতে তাঁর এই তৎপরতার কথা বেরিয়ে আসতেই। তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হলো। জেলে পাঠানো হল। জেল থেকে লেখা তাঁর চিঠিতে এবং পরে কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমানে বেরিয়েও আসে তাঁর আসল ভূমিকার কথা। এও বেরিয়ে আসে উত্তরপ্রদেশ সরকার ৬৮ লক্ষ টাকার অক্সিজেন বিল বাকি রাখতেই হাসপাতালে ওই ভয়াবহ শিশু মৃত্যুর ঘটনা।
আরো পড়ুন-তন্ত্র,মন্ত্র,গণতন্ত্র,পর্ব ৪: হাজার হাজার নাসরিন সোতুদের ভারে জেল উজাড় হয়ে যাছে আমার দেশের!
এসবের ফলে একটা জিনিস ঘটেছে, যা কফিল খান জেলে না গেলে হতে পারতেন না, তিনি জাতীয় হিরো হয়ে গেছেন। হাসপাতালের ঘটনায় ছাড়া পাওয়ার পর কাফিল এখন প্রকাশ্যে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আগে যিনি চুপচাপ হাসপাতালে আসতেন, শিশুদের দেখভাল করতেন, হাসপাতালে আসতেন সংবেদনশীল চিকিৎসা কর্মী হয়ে, তিনিই এখন প্রতিবাদের মুখ, জ্ব্লে ওঠার অঙ্গীকারের নাম, ধন্যবাদ রাষ্ট্র, এই কফিল খানকে উপহার দেওয়ার জন্য।
তাই কাফিল খানের ডাক এসেছিলো আলীগড় মুমসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএএ বিরোধী জমায়েতে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। ‘প্রদাহজনক, কাল্পনিক এবং উদ্দীপক বক্তৃতা’ দেওয়ার জন্য ২০১৯-র ডিসেম্বরে মুম্বই থেকে ফের গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে কাফিলকে জেলে ঠেলে রাষ্ট্র এখন মহা বিপদে। কোর্ট তাঁর বক্তৃতায় কিছুই পেলো না। তাই আবার মুক্ত তিনি, লম্বা দাড়ি, মুখে জয়ের হাসি, চোখে প্রত্যয় ।
এবার কাফিল কিন্তু ফিনিক্স পাখির মত বেরিয়েছেন। প্রথমবার জেল থেকে বেরিয়ে জীবনে যা যা করেননি করছেন তিনি। তাঁর হাসি ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার তিনি আরও উড়বেন। শাপে বর হয়েছে। উড়ুন, কাফিল উড়ুন। আবারো ধ্যনবাদ দিন রাষ্ট্রকে। এই কাফিল খানকে উপহার দেওয়ার জন্য।
যমুনায় জল অনেক বয়েছে এক সময়। এখন যমুনা শুকনো। আর শুকনো যমুনায় জল আনার দায়িত্ব এখন সম্ভবত নিয়ে নেবেন কাফিল খান। রাষ্ট্রশক্তি তাঁকে মাটির তাল থেকে মূর্তি বানিয়েছে, এখন তাঁর শুধু ময়ূরপঙ্খী হয়ে উঠার অপেক্ষা।