রত্না, @blowinindwind
জুন ২৮, ২০২০: জন্মস্থান, কাল, পাত্র বদলে যেতে চলেছে করোনা ভাইরাসের?
করোনা ভাইরাসের জন্মস্থান এবং সময় নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য খুঁজে পেলো বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধান বলছে বার্সেলোনা শহরের একটি নালায় ২০১৯ সালের ১২ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে ‘পিয়ার রিভিউ’ হওয়ার পরেই কোনো মেডিকেল জার্নালে ছাপার চূড়ান্ত সম্মতি পাবে এই নতুন আবিষ্কার। আর তা পেলে করোনা ভাইরাসের জন্মস্থান এবং সময় নিয়ে অনেক প্রচলিত ধারণাই আমূল বদলাতে হবে আমাদের। যার অর্থ উহানের ৯ মাস আগে থেকেই এই ভাইরাস আমাদের মধ্যে আছে, চীনা এই শহর থেকেই ডিসেম্বর মাসে করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত বলে আমাদের জানানো হয়। স্পেনে এই ভাইরাস পাওয়া যায় জানুয়ারি মাসে।সরকারিভাবে ৩১ জানুয়ারি স্পেনের ক্যানারি দ্বীপে প্রথম কবিড-১৯ রোগীকে সনাক্ত করা হয়। তিনি একজন জার্মান পর্যটক ছিলেন।
বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্টদের একটি দল নালাতে জমে থাকা জলের নমুনা তুলে এনে পরীক্ষণাগারে গবেষণা করেছেন এবং সেখানেই এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। ভাইরোলজিস্টদের এই দলটি মার্চ মাসের ১২ তারিখের একটি নমুনা পরীক্ষা করছিলেন, তখনই চমকে দেওয়ার মত এই তথ্য আবিষ্কার করেছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নালার জল নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা। মার্চ মাসের নমুনাটি ছাড়া আর কোনো নমুনাতেই করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এই তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
ছবি: বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট
‘পূর্ব প্রকাশনী’ হিসেবে এই নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে medrxiv.org নামের একটি প্রথম সারির বায়োমেডিক্যাল জার্নালে। তবে এই গবেষণার ফল চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি। এই গবেষণার ফল সবুজ সংকেত পাবে ‘পিয়ার রিভিউ’ হওয়ার পর।
‘পিয়ার রিভিউ’
পিয়ার রিভিউ হচ্ছে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল নিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি অংশ তার খুঁত বার করার চেষ্টা করেন, কেমনভাবে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে, কীভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে, কী, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এই সব নানা খুঁটিনাটি তথ্য জেনে তাঁরা মতামত দেন। তারপরই সেই গবেষনাপত্রকে সবুজ সংকেত দেন তাঁরা। তারপর সেই গবেষণা কোনো মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয়।
এই রিপোর্ট প্রকাশ করে, বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগের প্রধান এবং স্প্যানিশ সোসাইটি অফ ভাইরোলজির প্রেসিডেন্ট আলবার্ট বশ জানিয়েছেন, ‘বার্সেলোনায় প্রতি বছর প্রচুর বিদেশী পর্যটকরা আসেন। ফলে এটা সম্ভব যে সেই সময়ে পৃথিবীর অন্য কোথাও ভাইরাসটি থেকে থাকতে পারে।’ পিয়ার রিভিউ না হলেও এই গবেষণা ইউরোপে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাস আসলে নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এই ভাইরাসের অনেকগুলি ধরণ আছে। নতুন করোনা ভাইরাসটি অর্থাৎ সার্স-কোভ-টু এই প্রজাতির ভাইরাসের একটি ধরণ। ২০১২ সালে যেমন পশ্চিম এশিয়ায় মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম ) ধরা পরে। ওই অঞ্চলের ১২টি দেশ-ই এই ভাইরাসের অস্ত্বিত্ত আছে বলে জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মার্স এসেছে উটের থেকে সংক্রমিত হয়ে। এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সার্স-কোভ-টু এসেছে উহানের ‘ওয়েট মার্কেট’ থেকে। বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্টরা এখন সবুজ সংকেত পাওয়ার অপেক্ষায় আর তা পেলে সার্স-কোভ-টু-র জন্ম পঞ্জিকায় বড়োসড়ো বদল আসতে পারে।