তন্ত্র, মন্ত্র, গণতন্ত্র – পর্ব ১

Featured Reports

Editor's Picks

kerala-elephant- death
 সৌজন্যে: কোম্ফ্রেক/পিক্সাবে

@blowinindwind

সন্তান-সম্ভবা একটি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মানুষ বলবো তাদের, যাদের পৈশাচিকতা কেড়ে নিয়েছে একটি নির্বিরোধী বন্য প্রাণ? আরো এক ধাপ এগিয়ে, এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি। এমনকি সাম্প্রদায়িক ছুরিও ফালা ফালা করে ফেলেছে এই #খবরখবরখেলা-কে। হাতি হত্যা নিয়ে যথারীতি কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণও শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অলিম্পিক ১০০ মিটার দৌড়ের মতোই প্রথম পোস্ট করার দৌড়ে জিতেছেন অনেক ডিম্ব-ভক্ষণকারীরাও। নিজের সামাজিক অবস্থানটা দ্রুত স্পষ্ট করে দিতে হবে যে! 

যাঁরা হাতি ‘হামলাকারী’দের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এই তাঁরাই বাসে গর্ভবতী মহিলা দেখেও বসার জায়গাটি আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেন হারাবার ভয়ে, যাঁদের স্ত্রীরা কখনও স্বেচ্ছায় কখনো নাছোড় পারিবারিক চাপে বাধ্যত সন্তান গর্ভে নেন, তারপরও হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে অফিস করেও, বাড়ির কাজ করেন। কজন পুরুষ বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে সেই শ্রম ভাগ করে নেন? মেয়ে জন্ম দিলে এখনও এই পোড়া দেশের শিরায় শিরায় রক্ত-লালসা, তা দেখে কজন গর্জে উঠেন প্রতিবাদে? মাতাল স্বামীর হাতে মার্ খেয়ে পাশে বাড়ির তরুণী বধূর যখন গর্ভপাত ঘটে যায় তখন এঁরাই সেঁধিয়ে যান আরো ভিতরের ঘরে, চুপচাপ চাবি লাগিয়ে দেন মূল্যবোধের লকারে। কিন্তু সন্তান-সম্ভবা হাতি মৃত্যুতে মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়া আলো করে  ভেসে ওঠে স্কেচ, ড্রইং আর ইলাস্ট্রেশন। ইন্টেলিজেন্সিয়া জিন্দাবাদ। শব্দ খেলা আর শিল্প খেলায় অমর হয়ে যায় একটি সন্তান-সম্ভবা হাতি।

অমর হন না সাফুরা জারগর্। সাফুরা জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল করছেন, সাম্প্রদায়িক আইন সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সাফুরা জারগর্-এর গ্রেফতার নিয়ে তাঁরা টুঁ শব্দটি করেননি। রাজনৈতিক ছাপ্পা লেগে যাওয়ার ভয়ে? গ্রেফতারের সময় সাফুরা গর্ভবতী ছিলেন। চর্চা করার জন্য এর থেকে মুচমুচে বিষয় আর কি হতে পারে!  সাফুরা বিবাহিত না বিবাহিত নন, না হলে কেন বিবাহিত নন এবং কেন গর্ভবতী, তার সন্তানের পিতা কে, এসব প্রশ্নে, চোখা চোখা শব্দ বৃষ্টিতে যখন সাফুরা আপাদমস্তক ভিজেছেন তখন কেউ তাঁর জন্য ছাতা ধরতে যাননি। সন্তান-সম্ভবা হাতির মৃত্যু নিয়ে যখন দেশ জুড়ে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে তখন, বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের জন্য, চার মাসেরও বেশি অন্ত:সত্ত্বা সাফুরার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাচ্ছে । সাফুরাকে ইউএপিএ আইনে গ্রেফতার করা হয় এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে। ইউনাইটেড নেশনস-এর ব্যাংকক রুলস-এর নিয়মবিধি সাফুরার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে এমন প্রমান এখনো মেলেনি। সাফুরার সন্তানের ভ্রুন একটু একটু করে মাংসপিন্ড হবে, মাথা, হাত, পা, হৃদয় তৈরী হবে সাফুরার সন্তানের, তিহার জেলের চার দেওয়ালের সঙ্গে সাফুরার সখ্যতা বাড়বে, আর আমরা মধ্যবিত্ত নপুংসকরা মূল্যবোধে নামাবলী চড়াবো । 

আরও আছে সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯। মিনুয়ারা, সোনুয়ারা এবং রুমেলা নামের তিন মহিলাকে গুয়াহাটিতে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় অসমের বুরহা অউটপোস্টের পুলিশ। নগ্ন করে মার্ থেকে ছ্যাঁকা দেওয়া, যতরকমভাবে একটি মেয়েকে অর্ধমৃত করে দেওয়া সম্ভব তা করা হয়। গর্ভবতী ছিলেন সোনুয়ারা। এদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমান পুলিশের কাছে ছিলনা।  কিন্তু এই অত্যাচারের পর সোনুয়ারার সন্তানটি আর পৃথিবীর আলো দেখেনি। সোনুয়ারার সন্তানের ভ্রুন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে, সোনুয়ারার বুকফাটা চিৎকার আমরা আড়চোখে দেখেছি। কেউ কেউ জানিও না এমন একটি নৃশংস ভ্রুন হত্যার কথা। সোনুয়ারারা ট্রেন্ডিং হন না। যাঁরা সন্তান-সম্ভবা হাতি মৃত্যুতে কুমিরের কান্না কাঁদছেন তাঁরা কেউ ফেটে পড়েনি এই নৃশংসতার প্রতিবাদে। আমাদের মূক দুঃখগুলো আসলে সযত্নে তোলা থাকে বিশেষ আনুষ্ঠানে স্টেজ পারফরমেন্স দেবে বলে। 

এই সাফুরা, মিনুয়ারা, সোনুয়ারা এবং রুমেলারা গিজ গিজ করছে ভারতবর্ষে, দিনের আলোয়, রাতের অন্ধকারে তারা একটু একটু করে হেরে যায় রাষ্ট্র নামক এক অদৃশ্য শক্তির কাছে।   

শুধুমাত্র মেয়েদের কথা না হয় বাদ দিলাম। যাঁরা এই হাতির ঘায়েল হওয়া নৃশংসতার চরম প্রকাশ বলে মনে করছেন, যাঁরা হ্যাশট্যাগে shameonyoukerala লিখে যে ভাইরাল ট্রেন্ডসেটার হওয়ার দৌড়ে, তাঁরাই লকডাউন উপেক্ষা করে বাজারের থলি হাতে কাতলা মাছের মাথা থ্যাঁতলাতে যান, তার আগে ভালো করে দেখে নেন মাছটা জ্যান্ত কিনা! খুঁজে খুঁজে ডিমভরা ট্যাংরা মাছ পেয়ে গেলে দরাদরিও করেন না।  লকডাউন রবিবারের সকালে বেরিয়ে পড়েন কচি পাঁঠার নলি কাটাতে । ফিনকি দিয়ে বেরানো রক্তস্রোতে যত ভিজবে মাংসওয়ালার লুঙ্গি তত জমবে দুপুরের গরম ভাত। অথবা পুস্তুকাসহ মুরগিকে আদা, পেয়াঁজ, রসুন সহযোগে ভালো করে মাসাজ করে যদি সেঁধিয়ে দিতে পারেন মাইক্রোওভেনে, তওবা তওবা। শুয়োর বা গরুর প্রসঙ্গ না হয় আজ থাক। 

বাকিটা স্রোতে ভাসা। হ্যাশট্যাগ-টা শুধু নিশানায় লাগাতে হবে।

Share

Related Posts

More Related news

susmit sen bangla interview

‘সঙ্গীতের গ্লোবালাইজেশন আসলেই হয়নি’

ভারতীয় সমসাময়িক সঙ্গীত জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া বঙ্গ সন্তান সুস্মিত সেন ভারতের অন্যতম সেরা সুরকার। রত্নার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সুস্মিত সেন ।

COMMENTS & DISCUSSION

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Support Our Journalism

Why is our journalism unique? It’s because we don’t take a single rupee as ad money from foreign companies, domestic monopolies, governments, political parties, and NGOs. The only support we need and take is from critical-thinking readers like you. Because when you pay us, it doesn’t come with any hidden agenda. So, make a donation, and help our journalism survive.

Join Our Email Subscription List

For news that the mainstream media is hiding from you

Share

GET UNCENSORED NEWS!

Email is still the best way to bypass censorship. Enter your email ID below, and get our latest reports – uncensored!

WhatsApp Update

Also, WhatsApp ‘Get updates’ to 9821045739, and get links to our work on your phone.