তন্ত্র, মন্ত্র, গণতন্ত্র: পর্ব ৩

ড: কাফিল খান: একজন সাধারণ ডাক্তার থেকে প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠার কাহিনী

Featured Reports

Editor's Picks

রত্না  

রাষ্ট্রশক্তির কাছে ড: কাফিল খানের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, তাঁকে জাতীয় হিরো বানিয়ে দেওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আলিগড়ের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্র ভূষণ সিংহের কাছেও। গত দেড় বছরের ঘটনাক্রম দেখলে অর্থাৎ, প্রশাসনের সংগঠিত প্রয়াসে ড: কাফিল খানকে জেলে ভরা থেকে তাঁর হিরো হয়ে ওঠা, এই গোটা ঘটনা একটা সুন্দর প্রয়াসে হয়েছে এমনটাই মনে হবে। সাতমাস বাদে জেল থেকে বেরোনো ড: কাফিল খান আর পুরনো কাফিল খান দুজন এক্কেবারে অন্য মানুষ।

২০১৭-র আগস্টে, গোরখপুরের হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে চার দিনে ৬৩ জন শিশু মৃত্যুর ভয়াবহ ঘটনার আগে অবধি কাফিল খান একজন অত্যন্ত সাধারণ ডাক্তার, সাধারণ মানুষ এবং সরকারি কর্মচারী ছিলেন। এখানে সাধারণ মানুষ এবং ডাক্তার বলতে বোঝানো হচ্ছে যিনি কর্তব্যপরায়ণ, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন, এবং একজন সংবেদনশীল চিকিত্সা কর্মী। আগুনে বক্তৃতা বা আদর্শবাদী এক্টিভিজম কোনোটাই তিনি কোনোওকালে করেননি। বরং তাঁর ডেন্টিস্ট স্ত্রীর নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালও আছে।

গোরখপুর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বরং তিনি বিপদকালীন পরিস্তিতিতে একজন চিকিৎসকের মতই কাজ করেছিলেন। ছুটে, দৌড়ে, ভিক্ষা করে, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাচ্ছাদের জন্য আপৎকালীন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এপর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু বিপদ ঘনিয়ে এলো মিডিয়াতে তাঁর এই তৎপরতার কথা বেরিয়ে আসতেই। তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হলো। জেলে পাঠানো হল। জেল থেকে লেখা তাঁর চিঠিতে এবং পরে কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমানে বেরিয়েও আসে তাঁর আসল ভূমিকার কথা। এও বেরিয়ে আসে উত্তরপ্রদেশ সরকার ৬৮ লক্ষ টাকার অক্সিজেন বিল বাকি রাখতেই হাসপাতালে ওই ভয়াবহ শিশু মৃত্যুর ঘটনা।

আরো পড়ুন-তন্ত্র,মন্ত্র,গণতন্ত্র,পর্ব ৪: হাজার হাজার নাসরিন সোতুদের ভারে জেল উজাড় হয়ে যাছে আমার দেশের! 

এসবের ফলে একটা জিনিস ঘটেছে, যা কফিল খান জেলে না গেলে হতে পারতেন না, তিনি জাতীয় হিরো হয়ে গেছেন। হাসপাতালের ঘটনায় ছাড়া পাওয়ার পর কাফিল এখন প্রকাশ্যে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আগে যিনি চুপচাপ হাসপাতালে আসতেন, শিশুদের দেখভাল করতেন, হাসপাতালে আসতেন সংবেদনশীল চিকিৎসা কর্মী হয়ে, তিনিই এখন প্রতিবাদের মুখ, জ্ব্লে ওঠার অঙ্গীকারের নাম, ধন্যবাদ রাষ্ট্র, এই কফিল খানকে উপহার দেওয়ার জন্য।

তাই কাফিল খানের ডাক এসেছিলো আলীগড় মুমসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএএ বিরোধী জমায়েতে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। ‘প্রদাহজনক, কাল্পনিক এবং উদ্দীপক বক্তৃতা’ দেওয়ার জন্য ২০১৯-র ডিসেম্বরে মুম্বই থেকে ফের গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে কাফিলকে জেলে ঠেলে রাষ্ট্র এখন মহা বিপদে। কোর্ট তাঁর বক্তৃতায় কিছুই পেলো না। তাই আবার মুক্ত তিনি, লম্বা দাড়ি, মুখে জয়ের হাসি, চোখে প্রত্যয় ।

এবার কাফিল কিন্তু ফিনিক্স পাখির মত বেরিয়েছেন। প্রথমবার জেল থেকে বেরিয়ে জীবনে যা যা করেননি করছেন তিনি। তাঁর হাসি ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার তিনি আরও উড়বেন। শাপে বর হয়েছে। উড়ুন, কাফিল উড়ুন। আবারো ধ্যনবাদ দিন রাষ্ট্রকে। এই কাফিল খানকে উপহার দেওয়ার জন্য।

যমুনায় জল অনেক বয়েছে এক সময়। এখন যমুনা শুকনো। আর শুকনো যমুনায় জল আনার দায়িত্ব এখন সম্ভবত নিয়ে নেবেন কাফিল খান। রাষ্ট্রশক্তি তাঁকে মাটির তাল থেকে মূর্তি বানিয়েছে, এখন তাঁর শুধু ময়ূরপঙ্খী হয়ে উঠার অপেক্ষা।

Share

Related Posts

More Related news

susmit sen bangla interview

‘সঙ্গীতের গ্লোবালাইজেশন আসলেই হয়নি’

ভারতীয় সমসাময়িক সঙ্গীত জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়া বঙ্গ সন্তান সুস্মিত সেন ভারতের অন্যতম সেরা সুরকার। রত্নার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সুস্মিত সেন ।

COMMENTS & DISCUSSION

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Support Our Journalism

Why is our journalism unique? It’s because we don’t take a single rupee as ad money from foreign companies, domestic monopolies, governments, political parties, and NGOs. The only support we need and take is from critical-thinking readers like you. Because when you pay us, it doesn’t come with any hidden agenda. So, make a donation, and help our journalism survive.

Join Our Email Subscription List

For news that the mainstream media is hiding from you

Share

GET UNCENSORED NEWS!

Email is still the best way to bypass censorship. Enter your email ID below, and get our latest reports – uncensored!

WhatsApp Update

Also, WhatsApp ‘Get updates’ to 9821045739, and get links to our work on your phone.